আলোচিত সংবাদ

অন্ধকার পাথরের পাহাড়ে ডুকে শেষ পরিনতি যা হলো দেখুন ভিডিওতে, তুমুল ভাইরাল ভিডিও

উপকথাগুলোতে সাধারণত যা হয়। রেগে গিয়ে সর্দার ঘোষণা করে, এই সুন্দরীকে নির্বাসনে দাও। এমন জায়গায় তাকে রেখে আসো; যেন সে পৃথিবীর আলো বাতাস দেখতে না পায়। যেমন কথা তেমন কাজ। সমুদ্র ঘেরা পাহাড়ের এক গুহায় তাকে দেয়া হয় নির্বাসন।

আলো-বাতাসহীন গুহায় জেলেকন্যার সময় কাটে না। সেখানে নেই কোনো খাবার-পানীয়। তবু সব না পাওয়ার মধ্যেও তার অপেক্ষা কেবল সেই যুবকের। যে তাকে ভালোবেসে এখান থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাবে।

ভালোবাসার সেই রাজপুত্র আর আসে না। কেবলই অপেক্ষা। কোনো এক ঝড়ো হাওয়া এবং ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রাতে মেয়েটি পাথরে পরিণত হয়ে যায়। কিন্তু পাথর হয়েও তার অপেক্ষার যেন শেষ হয় না। পাথুরে কন্যা গুহার ভেতরে আজো শুয়ে আছে।

চুল তার এলোমেলো। পথ চাওয়া উদাস দৃষ্টি সাগরের দিকে। চোখে তার আশা নিরাশার দোলাচল। ঠিক তার বিপরীতে আরেকটি মূর্তি। এটি সেই প্রেমিক জেলে। যে সময়মতো পৌঁছতে পারেনি তার মনের মানুষের কাছে। যুবকটিকে দেখে মনে হয় প্রেমিকার আকুতি শোনার জন্য সে-ও উদগ্রীব।

তাদের পরিণতি সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানে না কেউই। হতে পারে রোমিও-জুলিয়েটের মতো হয়তো যুবকও স্বেচ্ছায় পাথরে পরিণত হয়েছে। এজন্য প্রেমিক- প্রেমিকার কাছে এটি একটি পবিত্র গুহা। ভালোবাসার পুণ্যভূমি।

এই পাহাড়ের ভেতরেই বিশাল গুহা। পাহাড়ের নিচে পর্যটকরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন কেভ-এ প্রবেশের

এতক্ষণ যে উপকথাটি বলেছি, সেটি একটি গুহার গল্প। গুহাটির নাম ‘ত্রিন নো কেভ’। ভিয়েতনামের হা লং বে’তে যারা বেড়াতে আসেন, তাদের সিংহভাগই এখানে আসেন। ট্যুর প্যাকেজের মধ্যেই এটা থাকে। পয়সা আগেই নেয়া হয় বলে কোনো পর্যটকই এটা মিস করতে চান না।

সকাল বেলা। ব্রেকফাস্ট সেরেই আবার ট্রলারে। দূর থেকে দেখছি মাঝারি সাইজের একটা পাহাড়। তার উপরের দিকে পেটের মধ্যে একটা মুখ। পেটকাটা পাহাড়। কাটা জায়গায় চিলেকোঠার মতো বারান্দা। তিন দিকে পাহাড়ে ঘেরা ওই জায়গায় গিয়ে নৌকো থামে। পাহাড়ের নিচে পানির ওপরে জেটি। আমাদের পেছন পেছন আরো তিন চারটে নৌকো এসে থামে। দেখতে দেখতে পুরো নির্জন এলাকা মানুষে সরগরম হয়ে ওঠে। নৌকো থেকে নেমে যাই টিকিট ঘরের সামনে। সাইনবোর্ড দেখার চেষ্টা করি। জায়গাটার নাম কি? গুহাটার নাম কী? এখানে কি আছে? কিছুই জানি না। সাইনবোর্ড ভিয়েতনামের ভাষায়। বোঝার উপায় নেই। একটা জায়গায় ইংরেজিতে লেখা ‘সাং সট কেভ’।

এর আগে পাহাড়ের উপর উঠতে গিয়ে ভালোই বেগ পেতে হয়েছে। তাই হাইকিং শুনে ভয় পাচ্ছি। গাইড জানায়, তিনশ সিঁড়ি ভাঙতে হবে। আগেরবার ছিলো চারশ। এই শুনে জাহিদ হাসান বললেন, আমি যাব না। অন্যরা? সবাই যাওয়ার পক্ষে। আমি উনাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করি। উপরের পেটকাটা জায়গাটা দেখিয়ে বলি, ওই পর্যন্ত উঠতে হবে। তার বেশি না। যতই বোঝানোর চেষ্টা করি, উনি যাবেন না। বুড়োরাও উঠে যাচ্ছে, উনি যাবেন না। অবশ্য উনার শরীর খুব একটা ভালো নেই। কেবল জ্বর থেকে উঠেছেন। কি আর করা! উনাকে রেখেই ওঠা শুরু করি।

কিছুদূর উঠেই পথ হারিয়ে যায় জঙ্গলে। সিঁড়িগুলো একেবারে খাড়া এবং বিপজ্জনক। তার মাঝে দাঁড়িয়ে নিচের মানুষগুলোর ছবি নিই মোবাইল ফোনে। তারপর হাঁটি। হাঁপাতে হাঁপাতে উঠছি। একটা জায়গায় গিয়ে বিশ্রাম নিই। আবার উঠি। মিল্টন আর ফিরোজ আলম সুজানাদের সঙ্গে। এখানে অবশ্য সুজানাদের অভাব নেই!

পাহাড়ের গুহা বলে কিছুটা ভয় পাচ্ছি। এর আগে একবার ভয়ংকর এক গুহায় ঢুকেছি। বছর দশেক আগের কথা। আলুটিলা, বাংলাদেশের অনেকেই জায়গাটি চেনেন। খাগড়াছড়ির এই পাহাড়টি বিখ্যাত এর কেভ বা গুহার জন্য। প্রথম দিকে প্রবল উৎসাহে গিয়েছি। কিন্তু গুহার মুখে গিয়ে আমার পা আর নড়ে না। অসম্ভব! এমন ভয়ংকর গুহার ভেতরে আমি ঢুকতে পারব না! জীবিত ফিরতে পারব না! দম বন্ধ হয়েই মারা যাব! কিন্তু তিন চারজন সঙ্গে যারা ছিলেন তার কেউই আমাকে ছাড়া যাবে না। পড়ে যাই লজ্জ্বায়। ভয়ে দম অনেকটা বন্ধ হয়ে আসছে। কি করব? যা থাকে কপালে। প্রবল অনিচ্ছা সত্ত্বেও হাতে মশাল নিয়ে সরু, অন্ধকার সুড়ঙ্গের ভেতরে প্রবেশ করি। ভেতরে কাদা, পানি, পিচ্ছিল পাথর। অক্সিজেনও কম। ঘন অন্ধকার। পাহাড় যদি কোনো কারণে নিচে নেমে আসে তাহলেই সব শেষ। পথ আর ফুরোয় না। ১৫ থেকে ২০ মিনিট হাঁটার পর অপর প্রান্তে আলো দেখে জীবন ফিরে পাওয়ার আনন্দ পেয়েছি। উপরে এসে বোঝার চেষ্টা করেছি কীভাবে সুড়ঙ্গটা হলো। তিন দিকে পাহাড়ের তিনটি মাথা। মাঝখানে নিচু খাদ। জমা হওয়া বৃষ্টির পানি নিচে নামতে গিয়ে সরু কোনো পথ খুঁজে পেয়েছে। সেই পথ ধরে বছরের পর বছর পানি নিচে গড়িয়ে বড় সুড়ঙ্গে পরিণত হয়েছে।

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!