ডা. মুরাদের অশ্লীল বক্তব্যের ৩৮৭ লিঙ্ক
ডা. মুরাদ হাসানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া অশ্লীল, অমর্যাদাকর ও আপত্তিকর উক্তির ৩৮৭ অডিও-ভিডিওর লিংক চিহ্নিত করার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) আইনজীবীরা।
এর মধ্যে ১৫টির লিংক ফেসবুক ও ২টি ইউটিউব অপসারণ করা হয়েছে। আজ বুধবার (৮ ডিসেম্বর) বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ প্রতিবেদন দাখিল করেছে বিটিআরসি।বিটিআরসির আইনজীবী খোন্দকার রেজা-ই রাকিবের দাখিল করা প্রতিবেদনে বলা হয়, মুরাদ হাসানের অশ্লীল অডিও-ভিডিও লিঙ্ক ইউটিউবে চিহ্নিত করা হয়েছে ১১৫টি। এর মধ্যে মুছে ফেলা হয়েছে ২টি। ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে অন্যান্য অশ্লীল অডিও-ভিডিও অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে বিটিআরসি।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা মুরাদ হাসানের অশ্লীল-কুরুচিপূর্ণ ফোনালাপ ও ভিডিও সরানোর নির্দেশনা চান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একই বেঞ্চ গতকাল মুরাদ হাসানের অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যের অডিও-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে সরাতে ব্যবস্থা নিতে বলেন। এ জন্য পদক্ষেপ নিতে বিটিআরসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষকে কথা বলতে বলে আজ বুধবার এ বিষয়ে অগ্রগতি জানাতে বলেন আদালত। আদালতে বিটিআরসির পক্ষে আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই-রাকিব ওই তথ্য তুলে ধরেন। অন্যদিকে ছিলেন আইনজীবী সৈয়দ সায়েদুল হক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিপুল বাগমার।
পরে খন্দকার রেজা-ই রাকিব সাংবাদিকদের বলেন, আদালতের আদেশের বিষয়টি নজরে আসার পর একটি কমিটি গঠন করে কাজ শুরু করা হয়েছে। কমিটি ফেসবুক ও ইউটিউবকে এ বিষয়ে নোটিশ করে। চিহ্নিত ৩৮৭টি লিঙ্কের মধ্যে ফেসবুক ১৫টি ও ইউটিউব ২টি লিঙ্ক অপসারণ করেছে। আশা করা হচ্ছে, বাকি লিঙ্কগুলো অপসারণ করা হবে। এর বাইরে ফেসবুকের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম আরও দুই শতাধিক লিঙ্ক চিহ্নিত করেছে বলে জানিয়েছেন এই আইনজীবী।
মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে ডা. মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। পদত্যাগপত্র গ্রহণের পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসানের পদত্যাগপত্র রাষ্ট্রপতি কর্তৃক গৃহীত হয়েছে। এ পদত্যাগ অবিলম্বে কার্যকর হবে।সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, তার ছেলে তারেক রহমান ও নাতনি জাইমা রহমানকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন তিনি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেত্রীদের নিয়েও আপত্তিকর ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের অভিযোগ ওঠে তথ্য প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে। এরপর থেকেই মুরাদ হাসানের পদত্যাগের দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে। এরই মধ্যে রোববার মধ্যরাতে চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহির সঙ্গে মুরাদ হাসানের আপত্তিকর ফোনালাপ ফাঁস হয়। মুহূর্তের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে ভাইরাল হয়ে যায় এটি।
মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী উপজেলা) আসনের সংসদ সদস্য। তার বাবা প্রয়াত মতিউর রহমান তালুকদার জামালপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কিত বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ডের কারণে মুরাদ সংবাদের শিরোনাম হয়েছেন। সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিমন্ত্রীর কিছু অডিও-ভিডিও ছড়িয়ে পড়ায় দেশজুড়ে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় বইছে।
এতে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও সরকার। বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে না পারলেও সারা দেশে দলের নেতাকর্মীরা তার ওপর বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় বিএনপিসহ বিভিন্ন নারী সংগঠনও তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। তারা ডা. মুরাদের পদত্যাগ দাবি করেন।
সোমবার প্রধানমন্ত্রী মুরাদ হাসানকে পদত্যাগের নির্দেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছিলেন, মঙ্গলবারের মধ্যেই পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে মুরাদকে।