মেয়ের বিয়ে দিতে এসে লঞ্চে নিখোঁজ বাবা-মা, ভাই
ঢাকা থেকে বরগুনাগামী লঞ্চ এমবি অভিযান-১০ এ ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এই দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জননের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আহত ও দগ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন শতাধিক মানুষ। লঞ্চ দুর্ঘটনায় এবার একই পরিবারের তিনজন নিখোঁজ হয়েছে।
শনিবার মেয়ের বিয়ে দিতে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন আবদুল হাকিম সঙ্গে স্ত্রী পাখি বেগম ও আড়াই বছরের ছোট ছেলে নাসরুল্লাহকে নিয়ে। তার বাড়ি বরগুনা সদর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডে। বড় মেয়ে হাফসার বিয়ে দেওয়া আর হলো না। তার আগেই অভিযান-১০ ট্র্যাজেডিতে বাবা-মা-ছোট ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না।
ফলে শরীফ বাড়িতে আজ বিয়ের আনন্দের বদলে কান্নার রোল পড়েছে।গতকাল শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ঝালকাঠি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে জানা গেল হাফসার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার করুণ গল্প। খবর শুনে হাফসার দাদি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
আর তার বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের লাশ খুঁজতে এসেছেন নানি ফরিদা বেগম, চাচা আবদুল মোতালেব শরীফ ও চাচাত চাচা ছত্তার শরীফ।কিছুক্ষণ পর পর কান্নায় ভেঙে পড়ছিলেন ফরিদা বেগম। শনিবার নাতনির বিয়ের দিন ছিলে। সেটা আর হলো না।এখন সেই মরদেহ পাব কি না, সেটাও জানি না। নানি ফরিদা বেগম বলেন, আমার আর কিছু লাগবে না।
কবরটা দেওয়ার ব্যবস্থা একটু করে দেন।নিখোঁজ আবদুল হাকিম শরীফের বড় ভাই আবদুল মোতালেব শরীফ বলেন, ঢাকা সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে খুব ছোট একটা পদে চাকরি করতেন আবদুল হাকিম। বড় মেয়ে হাফসা আমাদের ওখানে থেকেই লেখাপড়া করত। আর ছোট ছেলে নিয়ে ঢাকায় থাকতেন হাকিম। পরিবারের দেখাশোনায় হাফসার বিয়ে ঠিক হয়েছিল।
ছেলে বায়িং হাইজে চাকরি করে। শনিবার বিয়ের জন্য সব আয়োজন আমরা শেষ করে রেখেছি। হাকিমও বলেছিল, আমরা যেন সব গুছিয়ে রাখি। সে এসে অনুষ্ঠানাদি শেষ করে আবার চলে যাবে। ছুটি পায়নি। কিন্তু চিরদিনের জন্য ছুটি নিয়ে চলে গেছে হাকিম। তিনি বলেন, এখন কেমনে বাঁচবে হাফসা, আর কেমনে থাকব আমরা। বুঝতেছি না। যারা পুড়ে গেছে তাদের দেখেও চেনার উপায় নেই। অন্তত লাশগুলো বুঝে পেলেও মনরে বুঝাতে পারতাম।