আলোচিত সংবাদ

সাঁতারের মাঝেই প্রিয় সন্তানকে চিরবিদায়

বরগুনাগামী লঞ্চে আগুনের ঘটনায় আড়াই বছর বয়সী মেয়ে তাবাছছুমকে হারিয়েছেন তুহিন হাওলাদার। তিনি জানান, ঢাকা থেকে পাথরঘাটায় আসছিলেন তারা একই পরিবারের পাঁচজন। ল?ঞ্চে অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচার জন্য সবাই নদীতে লাফিয়ে পড়েন। চারজন বেঁচে গেলেও জীবন দিতে হয় বুকের ধন তাবাছছুমকে।

তুহিন আরও জানান, তাবাছছুমকে নিয়ে প্রাণপণে সাঁতার কাটছিলেন তিনি। ৩০ মিনিট পর নিস্তেজ হয়ে আসে শিশুটির দেহ। অনুভব করেন, মেয়ে আর বেঁচে নেই। তার হাতেই শিশুটির দম ফুরিয়ে গেছে। এতে সামনে এগোতে তার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। উপায়ান্তর না পেয়ে নিজে বাঁচার তাগিদে সন্তানকে ছেড়ে দেন নদীর বুকে। এখনও তার মরদেহ পাওয়া যায়নি।

পাথরঘাটা পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের শুভ কর্মকার জানান, তারা দোতলার একটি কেবিনে তার মা ও দুই ভাইবোন অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ লোকজনের ডাক-চিৎকার শুনে কেবিন থেকে বাইরে বের হয়ে আগুনের লেলিহান শিখা দেখতে পান। এরপর তারা নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ে সাঁতরে তীরে ওঠেন।পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হুসাইন আল মুজাহিদও সস্ত্রীক লঞ্চের নীলগিরি ভিআইপি কেবিনে ছিলেন। অগ্নিকাণ্ড থেকে বাঁচতে তারাও লঞ্চের ওপর থেকে নদীতে ঝাঁপ দেন। এ সময় তার স্ত্রীর পা ভেঙে গেলেও তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন।

লঞ্চটিতে পাথরঘাটার ফুলঝুড়ি যাওয়ার জন্য ৯ বছরের নাতি ফাহিমকে নিয়ে উঠেছিলেন বৃদ্ধা জরিনা বেগম। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তার আদরের নাতিকে কেড়ে নিয়েছে লঞ্চের আগুন। শিশুটিকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন জরিনা। আহাজারি করতে করতে তিনি বলেন, ‘হঠাৎ লঞ্চে আগুন লাগায় দিশেহারা হয়ে যাই।

তাপ সহ্য করতে না পেরে নাতিকে কাঁধের ওপর নিয়ে নদীতে ঝাঁপ দিই। কিন্তু সাঁতরে বেশি দূর এগোতে পারিনি। দু’জনই ডুবে যাচ্ছিলাম। এ অবস্থায় নাতিকে ছেড়ে দিয়ে পাড়ে উঠে আসি। তাকে আর পাব কিনা, জানি না। তবে লাশটা পেলেও মনটাকে বুঝ দিতে পারতাম। ওর বাবা-মায়ের সামনে আমি কী নিয়ে দাঁড়াব।’

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!