অন্ধ হাফেজ স্বামীকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ঝাঁপ দেন স্ত্রী
লঞ্চে অগ্নিকাণ্ড থেকে বেঁচে ফিরে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী হাফেজ মাহমুদুর রহমান মিরাজ বলেন, আমি তো অন্ধ, চোখে দেখি না। সেই রাতে যদি আমার স্ত্রী আমাকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে না ফেলে দিত তাহলে আর বেঁচে ফেরা হতো না।
জানা যায়, বরগুনা সদর উপজেলার ৯ নং বালিয়াতলী ইউনিয়নে বাড়ি তার।পাঁচজনকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে মা, সন্তান, স্ত্রী আর নিজে বেঁচে ফিরতে পেরেছেন।ফেরেননি বাবা ৫১ বছর বয়সী ইদ্রিস খান। গত বৃহস্পতিবার ২৩ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে বরগুনাগামী এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় মাহমুদুর রহমান বলেন, আব্বা অসুস্থ ছিলেন।তাকে ডাক্তার দেখাতে নিয়েছিলাম ঢাকাতে।
গত বৃহস্পতিবার ঢাকার সদরঘাট থেকে অভিযান-১০ লঞ্চে উঠে নিচতলার ডেকে আমরা পাঁচজনে বিছানা বিছাই। লঞ্চ ছাড়ার পর আমাদের গ্রামেরই আরেক পরিচিত এসে আব্বাকে দোতলায় নিয়ে যান। তিনি বলেন, আমি তো একা, আসেন খোশগল্প করতে করতে রাত পার করে দেই।মাঝরাতে হঠাৎ চারদিকে আগুন আগুন বলে চিৎকার শুরু হয়। তখন আমি, মা, আমার স্ত্রী ও কন্যা নিয়ে লঞ্চের সামনে চলে আসি। এই সময়ে আমার হাত ফসকে স্ত্রী ও কন্যা একবার হারিয়ে গিয়েছিল।
তবে কিছুক্ষণের মধ্যে তারা আমাকে খুঁজে পায়।এ সময় দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী যুবক আরও বলেন, আমি বারবার স্ত্রী ও মাকে বলছিলাম আব্বার সন্ধান নিতে। লোকজনের মধ্যে চিৎকার করে ডেকেছিও। কিন্তু আগুনে হয়তো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে, নয়তো ভিড় ঠেলে আসতে পারেনি। এখন এসেছি তাকে খুঁজতে। তিনি বলেন, সবাই তখন চিৎকার আর কান্নাকাটি করছিল।
আমরা চারজন লঞ্চের সামনে এক কিনারে ছিলাম। কী করব বুঝতে পারছিলাম না। তখন আমার স্ত্রী আমার মাকে ধাক্কা দিয়ে নদীতে ফেলে দেন। মা নদীতে পড়ে পায়ে মাটি পান। তিনি চিৎকার করে আমাদেরও ঝাপ দিতে বলেন। তিনি বলেন, মায়ের ডাকে সাড়া দিয়ে আমিও ঝাপ দিতে চাইছিলাম।কিন্তু ঝাপ দিয়ে লঞ্চের মধ্যে মানুষের গায়ে পড়ছিলাম। তখন আমার স্ত্রী আমাকেও লঞ্চের কিনারে এনে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং মেয়েকে নিয়ে নিজেও ঝাপ দেন। এরপর আমরা চারজনে সাঁতরে নদীর কিনারে উঠি। তিনি বলেন, এখন আসছি আব্বার লাশটা অন্তত নিয়ে যেতে।