একা গেলে বাচ্চারা মা মা বলে হাহাকার করবে তাই ওদের নিয়েই চলে গেলাম
ঠাকুরগাঁওয়ে মা ও দুই সন্তানের মরদেহ উদ্ধারের পর আরিফা বেগমের লেখা দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি উদ্ধার করেছে পুলিশ। চিঠিতে আরিফা বেগম তার আত্মহ;ত্যার কারণ লিখে রেখে গেছেন। শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়িতে মেয়ের পড়ার টেবিলে বই চাপা দেওয়া চিঠিটি উদ্ধার করা হয়।
রানীশংকৈল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদ ইকবাল জানান, আরিফার ঘরে তার মেয়ের বই-খাতা দিয়ে চাপা দেওয়া অবস্থায় একটি চিঠি খুঁজে পাওয়া গেছে। দুই পৃষ্ঠার চিঠিতে আরিফা বেগম লিখে গেছেন, ‘আহারে জীবন। সংসারের অভাব অশান্তি আর ভালো লাগে না। আমি একাই চলে যেতাম, কিন্তু একা গেলে আমার বাচ্চারা মা মা বলে হাহাকার করবে।
এজন্য ওদের নিয়েই চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। আমার মৃ;ত্যুর জন্য কেউ দায়ী না। আমি নিজেই আত্মহ;ত্যা করিলাম। এটা সত্যি একশ বার সত্যি একশ বার সত্যি একশ বার সত্যি। ’চিঠিতে আরিফা তার স্বামী আকবরকে উদ্দেশ্য করে লিখেছেন- ‘স্বামী তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নাই। আমার বিয়ের মোহরানা মাফ করে দিলাম।
তুমি ভালো থেকো। ‘ শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে উদ্দেশ্য করে আরিফা লিখেছেন, ‘আপনাদের সঙ্গে অনেক খারাপ আচরণ করছি এর জন্য মাফ চাই। ‘ আরিফার স্বামী আকবর আলী বলেন, অভাব-অনটনের সংসারে স্বামী-স্ত্রীর ঝ;গড়া-বিবাদ হয়েই থাকে। মঙ্গলবার একটি ঋণ দান সংস্থা থেকে ১৪ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলাম।
সেটা নিয়ে আরিফার সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যায় ঝগড়া হয়। অভাবের কারণে আরিফা সব সময় বলত, ‘আমি তোমার বাসায় থাকব না। যেখানে যাই, আমি ছেলে-মেয়েকে সঙ্গে করেই নিয়ে যাব। কিন্তু ছেলে-মেয়ে নিয়ে এভাবে চলে যাবে বুঝতে পারিনি। ‘ রাণীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল বলেন, পুলিশ প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে অভাব-অনটন ও সংসারে অশান্তি ছিল আরি;ফার।
এ কারণে দীর্ঘদিন ধরে হ;তাশা ও বিষণ্নতায় ভুগছিলেন তিনি। তাই মেয়ে ও ছেলেকে বিষাক্ত কোনো কিছু খাইয়ে পরে তিনি আত্মহ;ত্যা করে থাকতে পারেন। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পেলে সবটা জানা যাবে। মরদেহ উদ্ধারের পর স্বামী আকবর আলী, শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম ও দেবর বাবর আলীকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছিল পুলিশ। পরে তাদের স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের হেফাজতে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানান ওসি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) সকালে রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে বাড়ির সামনে পুকুর থেকে আকবর আলীর স্ত্রী আরিফা বেগম (৩২), মেয়ে আখলিমা আখতার আঁখি (১০) ও ছেলে আরাফত হোসেনের (৪) মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।