লাইফস্টাইল

মা-মেয়ের ৫ হাজার দিয়ে ব্য’বসা শুরু, এখন ১৫ লাখ বিক্রি

শুরু করেছিলেন মেয়ে অনন্যা আহসান। রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইন্টেরিয়র আর্কিটেকচার নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। পড়াশোনার সময় থেকেই একটা স্কুলে চাকরি করতেন।

ইচ্ছা ছিল, নিজে কিছু একটা করবেন। প্রথম বেতন ছিল মাত্র সাত হাজার টাকা।সেখান থেকেই নিজের পরিবহন খরচ রেখে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে কিনলেন পাঁচটি থ্রি–পিস। সেগুলো স্কুলে নিয়ে গেলেন।

সহকর্মীরাই সব কিনে নিলেন। পরের মাসে কয়েকটা থ্রি–পিস কিনলেন, নিজেও ডিজাইন করলেন কয়েকটা। সেগুলোও সব বিক্রি হয়ে গেল।২০১৪ সালে অনন্যা একটা অনলাইন পেজ খোলেন। কিন্তু করপোরেট চাকরির চাপে একা আর সেটা চালিয়ে নিতে পারেননি।

পরে মেয়ের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে মা রেজিনা সুলতানা শুরু করেন নিজের ব্যবসা। নাম রেজিনা’স ইয়েলো মার্ট। রেজিনা পড়াশোনা করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে।

কিছুকাল সাংবাদিকতা করেছেন, সাত বছর শিক্ষকতা করেছেন। তারপর দীর্ঘ সময় সংসার ছাড়া আর কিছুই করেননি। মাকে নতুন করে ব্যবসা করতে দেখে মেয়ের বুকের মধ্যে পুরোনো স্বপ্ন জেঁকে ধরে।

তিনি চাকরি থেকে টাকা গুছিয়ে মায়ের সঙ্গে অংশীদারত্বে ব্যবসা শুরু করেন। এভাবেই মা আর মেয়ে দুজন দুজনকে অনুপ্রাণিত করে ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে শুরু করেন রেজিনাস ইয়েলো মার্টের যাত্রা।

শুরুতে তাঁরা দোকান দিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে তাঁরা ব্যবসাটা অনলাইনেও নিয়ে আসেন।শাড়ি দিয়ে শুরু করেছিলেন এই মা-মেয়ে। নিজেরা শাড়ির নকশা করে কারিগরদের দিয়ে বানাতেন। তা ছাড়া, শাড়ি কিনেও বিক্রি করতেন।

এর সঙ্গে যুক্ত হলো অলংকার। শুরুতে মূলত ভারতের মুম্বাই আর পাকিস্তান থেকে গয়না এনে বিক্রি করতেন। পরে নিজেরাও ডিজাইন করে কিছু গয়না বানিয়েছেন। সম্প্রতি অনলাইনে বাড়িতে তৈরি খাবারও বিক্রি করতে শুরু করেছেন।

খাবারগুলো মূলত অনন্যার মা-ই বানান। সহায়তা করেন অনন্যার স্বামী। তাঁদের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া খাবার হলো মোমো। ভেতরের পুর বানান রেজিনা আর মোমো বানান তাঁর স্বামী।

এ ছাড়া অনন্যার স্বামী তাঁর কাজের অবসরে বৌ-শাশুড়ির ব্যবসার আর্থিক ও পণ্য ডেলিভারির দিকটি সামলান। রাজধানীর পুলিশ প্লাজায় দুটি শোরুম আছে তাঁদের।মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় যে ব্যবসার শুরু, সেটা এখন অনেকটাই বড় হয়েছে।

জিজ্ঞেস করলাম, ‘ধরুন, যদি কেউ এসে পুরো ব্যবসাটা কিনতে চায়, কত টাকায় বিক্রি করবেন?’ উত্তর এল এ রকম, ‘প্রথমত বিক্রি করব না, চালিয়ে যাব। তবে দাম যদি জানতে চান, সব মিলিয়ে আমাদের যা কিছু আছে, তার মূল্য কোটি টাকার কম নয়।

প্রতিদিন আমরা প্রায় লাখ টাকার পণ্য কিনি। মাসে ব্যবসা ভালো হলে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। সাধারণত আট লাখ টাকার বেচাকেনা থাকে। কিন্ত আমাদের খরচও তো প্রচুর।

যা লাভ থাকে, সেখান থেকে শোরুমের ভাড়া, ১৫ কর্মচারীর বেতন—সব দিয়ে মাঝেমধ্যে আমাদের নিজেদের বেতন রাখারই টাকা থাকে না। তবে হ্যাঁ, দুজন চাকরি করলে যা পেতাম, গড়ে সেই টাকা আমরা ব্যবসা করে আয় করতে পারি।’

একটা প্রশ্ন করেই ফেললাম, অনলাইনে তাঁদের পেজে পণ্যের দাম কেন লেখা থাকে না? দাম জানতে কেন ইনবক্সে যেতে হবে? দাম নিয়ে লুকোচুরির কারণ জানিয়ে এই উদ্যোক্তা বললেন, যেকোনো ব্যবসার জন্যই রিচটা গুরুত্বপূর্ণ।

দাম লিখে দিলে কমেন্ট অনেক কমে যায়। ফলে রিচ কমে যায়। এটা একটা কারণ। দ্বিতীয়ত, ইনবক্সে সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি আলাপ হয়। তৃতীয়ত, দাম লিখে দিলে অনেক সময় কমেন্ট বক্সে নেতিবাচক সব মন্তব্য জমা পড়ে।

কী কী চ্যালেঞ্জ ছিল? অনন্যা বললেন, ‘কত যে হোঁচট খেয়েছি, তা গুনে শেষ করা যাবে না। শুরুতেই সবাই বলতে শুরু করলেন, “এত লেখাপড়া করলে, এত ভালো পরিবার!

শেষমেশ কাপড় বিক্রি করবে?” নারী উদ্যোক্তা হয়ে ব্যবসা করা যে কত কঠিন, তা যাঁরা করেন, তাঁরাই জানেন। কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যে ভরে ওঠে কমেন্ট বক্স আর ইনবক্স। আর সাধারণ উত্থান–পতন তো আছেই।

বিক্রি ভালো যায়, খারাপ যায়, নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ এসে হাজির হয়। আমার মা সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এই ব্যবসার জন্য কাজ করেন। আমি দুপুর ১২টা থেকে কোনো কোনো দিন ভোর চারটা–পাঁচটা পর্যন্তও কাজ করি।

প্রতিদিন হাজারখানেক মেসেজের উত্তর দিই। ডিজাইন করি। লাইভ করি। ফটোশুট করি। মডেল নিলে আবার খরচ হবে, নিজেই মডেল হয়ে যাই। চ্যালেঞ্জের শেষ নেই। তবে দিন শেষে সন্তুষ্টি আছে।’ মা ও মেয়ে দুজন যে দুজনকে নিয়ে গর্বিত,

সে কথাও উঠে এল। মা রেজিনা বললেন, ‘আমার মেয়ে ছোটবেলা থেকেই নিজের জামাকাপড় নিজে ডিজাইন করত। অন্যরা আবার পছন্দও করত। আমারও আগ্রহ ছিল। সেখান থেকেই পথচলা শুরু। এখন তো দুজন মিলেই সমানভাবে হাল ধরেছি। আপাতত আর ছাড়ছি না।’

Related Articles

Back to top button
error: Alert: Content is protected !!